যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রথমবার মসজিদ পরিদর্শন করে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শন করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটিই ছিল জনসমক্ষে তার প্রথম কোনো মসজিদ পরিদর্শন।
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কূটনৈতিক সফরে মধ্যপ্রাচ্যে যান ট্রাম্প। এসময় আবুধাবির এই বিখ্যাত ইসলামিক স্থাপত্যে যান তিনি। ঐতিহ্য অনুযায়ী নিয়ম মেনে তিনি মসজিদের প্রবেশের আগে জুতা খুলে ফেলেন। এ সময় আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ খালেদ বিন মোহামেদ আল নাহিয়ান তাকে মসজিদ পরিদর্শনে সঙ্গ দেন।
ট্রাম্প বলেন, 'এটি কত সুন্দর! সত্যিই দারুণ। এটি একটি অসাধারণ সংস্কৃতি।' খবর এনপিআরের। সাদা মার্বেলের গম্বুজ, রঙিন ফুলের নকশা করা ইতালিয়ান মার্বেল মেঝে এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর জন্য পরিচিত শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ কেবল পর্যটকদেরই নয়, বিশ্বনেতাদের কাছেও এক আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক গন্তব্য।আবুধাবিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা গড়ে উঠেছে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে এই সম্পর্ক দৃঢ়তা পায়।এই সফর ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের তৃতীয় ধাপ। এর আগে তিনি সৌদি আরব ও কাতারে বিশেষ আড়ম্বরপূর্ণ অভ্যর্থনা পান — যেখানে তাকে রাজকীয় রীতিতে আরব ঘোড়া, সম্মান গার্ড এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বরণ করা হয়।
ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক সম্পর্কও এই অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। আবুধাবি, রিয়াদ ও দোহায় ট্রাম্প ব্র্যান্ডের টাওয়ার ও গলফ কোর্স গড়ে তোলা হচ্ছে। ইউএই-এর একটি ফান্ড ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল ব্যবহার করে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বিনান্স-এ ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও সম্পন্ন করেছে।মসজিদ পরিদর্শনের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষের ড. ইউসুফ আল-ওবাইদি ও আমিনা আলহামাদি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জারেড কুশনার ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই মসজিদ পরিদর্শন করেছিলেন। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেখ জায়েদ মসজিদ পরিদর্শন করেন।তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মসজিদে ট্রাম্পের সফরের তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কোনো মসজিদে গেছেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত গির্জা সফর করলেও, খুব কম সংখ্যক প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। ১৯৫৭ সালে প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি মসজিদ উদ্বোধন করেন এবং ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ সেখানে ভাষণ দেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৬ সালে বাল্টিমোরের একটি মসজিদে সফর করেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন— 'মসজিদগুলো থেকে ঘৃণামূলক ধারণা ছড়ায়' এবং সেগুলো নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিলেন।বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক ইসলামিক স্থাপত্য শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শন করেন ট্রাম্প। তার সঙ্গে ছিলেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ খালেদ বিন মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি ও ইসলামিক শিল্পকলার এক অনন্য প্রতীক। এটি দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ।
১৯৯৪ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০৭ সালের ঈদুল আযহা উপলক্ষে এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।
গালফ নিউজ জানায়, ট্রাম্প মসজিদের বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য ও সূক্ষ্ম ইসলামী শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন। এ সময় তাকে শেখ জায়েদের উত্তরাধিকার, ইসলামিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যশৈলীর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পরিদর্শনকালে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের মহাপরিচালক ইউসুফ আল-ওবাইদলি-সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।